বর্তমানে যে কথাগুলো খুবই পরিচিত, এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো দেশের বাইরে চলে গেলে দেশের জন্য আর কিছু করার থাকে না। কিন্তু এ কথাকে ভিত্তিহীন করে প্রবাসে থেকেও দেশের মানুষকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন পূজা। তা পুরো নাম চিত্রলেখা কর। তরুণদের মানসিক বিকাশে তিনি গড়ে তুলেছেন ‘বোল্ড অ্যান্ড বিকামিং’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তরুণদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা, নেতৃত্বগুণের বিকাশ ও আত্মনির্ভরতার পাশাপাশি আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করতে আয়োজন করছেন বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা, ওয়েবিনার এবং লেকচার সিরিজ।
পূজা বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় দেখবেন অনেকে আছেন- যারা পদার্থবিজ্ঞান পড়ছেন, উদ্ভিদবিজ্ঞান পড়ছেন, কেউ বা মার্কেটিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না এ বিষয়গুলো পড়ার পর তা তার জীবনে কীভাবে কাজে লাগবে, আদৌ জীবনের লক্ষ্য কী! এর কারণ মূলত সচেতনতার অভাব। অনেকেই পারিপার্শ্বিক চাপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো একটি বিষয়ে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হন। কিন্তু বিষয়টি তার কতটুকু ভালো লাগে, এ ব্যাপারে ভাবেন না। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা প্রকট। আমি ভেবেছি তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। কেননা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার মতো করে নিজেকে গড়তে হলে আগে নিজেকে জানতে হবে। আর সেটিই করার চেষ্টা থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া।’
পূজা শুধু যে দেশেই কাজ করছেন, তেমনটি নয়; বরং বাংলাদেশসহ আরও ৪টি দেশ- আফগানিস্তান, ভারত, নেপাল, নাইজেরিয়ার প্রায় কয়েক হাজার তরুণ ও নারীর বিকাশে কাজ করছে ‘বোল্ড অ্যান্ড বিকামিং’। এরই অংশ হিসেবে প্রতিমাসেই তিনি আয়োজন করেন একটি ওয়ার্কশপ ও একটি ওয়েবিনার। তবে শুরুর দিকে ছিল নানা প্রতিবন্ধকতা।
পূজা বলেন, ‘বাংলাদেশে কাজ করা আমার জন্য কঠিন ছিল। আমি মেয়ে হয়ে যখন কাজ করছি, তাও দূর থেকে- তখন এটা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে নেটওয়ার্কিং একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি আট বছরের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে। এখানে কাজ করা আমার জন্য সহজ। কিন্তু বাংলাদেশে এটা ততটাই কঠিন। নতুন করে সব শুরু করতে হয়েছিল। অনেকেই বলতেন, সঙ্গে আছি। কিন্তু কাজের সময় কাউকে পাওয়া যায় না। এ ছাড়া পরশ্রীকাতরতা তো আছেই। তার পরও কাজ করতে পেরেছি- এ জন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হয়।’
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত পূজা একই সঙ্গে নিউইয়র্কের একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এর পাশাপাশি চালিয়ে নিচ্ছেন নিজের এ প্রতিষ্ঠানটি। তবে প্রবাসে থাকায় বেশিরভাগ কাজেই তিনি যুক্ত হন অনলাইনে। তার আয়োজিত বিভিন্ন সেশনে অংশ নিয়েছেন অভিনয়শিল্পী বিপাশা হায়াত, ইরেশ জাকের, সংগীতশিল্পী ফুয়াদ, গণিতবিদ চমক হাসান, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য ড. রুবানা হকসহ অনেকে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ইএমকে সেন্টার এই প্ল্যাটফর্মের আউটরিচ পার্টনার হিসেবে কাজ করছে।
পূজা স্বপ্ন দেখেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশু-কিশোরদের কাছে পৌঁছে যাবে তার ‘বোল্ড অ্যান্ড বিকামিং’। তিনি বলেন, ‘আমার আসল চেষ্টা থাকে জেলা পর্যায়ে কাজ করার। কেননা আমি মনে করি, তাদের বেশ শক্ত করে শেখানো উচিত আত্মবিশ্বাসী হওয়ার বিষয়টি।’
– পূর্বা জান্নাত
দৈনিক আমাদের সময়
Original Link: দেশের মানুষকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন পূজা